প্রিসিলার ছবি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই ঘুরে বেড়ায় এক কিশোরীর আলাপচারিতার নানা ভিডিও। প্রিসিলা কখনো লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে-খাওয়া কৃষককে যুক্ত করে সবার সামনে তুলে ধরেন তার জীবন সংগ্রামের গল্প, কখনো ডাক্তার, নার্স ও পুলিশসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তাদের কথাগুলো। আবার কখনো অসহায়, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, দুঃস্থ মা-বোন ও শিশুদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার প্রশংসা কুড়ান ওই প্রিসিলা।
প্রিসিলার জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। তার পূর্বপুরুষরা সবাই কুমিল্লার এবং পরিবারের অনেকেই এখনো সেখানেই থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রিসিলার মা, বাবা ও এক চাচা এবং উনার পরিবার আছে। প্রিসিলার বাবা পেশায় একজন চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ প্রণেতা এবং একটা কর্পোরেশনের কর্মকর্তা। তার মাও একটা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার।
ছোটবেলায় প্রিসিলা হলিউডের মুভি দেখতে ভীষণ পছন্দ করত এবং তাতেই অভিনয়ের ইচ্ছা হয়। সে জন্য প্রিসিলা স্কুলে নাচ, গান ও অভিনয়ের দলে যোগদান করেন। এতে বিভিন্ন পুরস্কারেও তিনি ভূষিত হন।
মূলত এর পরপরই তার সুযোগ হয় অভিনয়ের জগতে প্রবেশের এবং তার আগ্রহ দেখে বাবা হলিউডের একটা প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে অভিনয় ও মডেলিং কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেয়। কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর নানা ব্যস্ততার কারণে অভিনয়ে পুরোপুরিভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, মাদার তেরেসার কিছু গল্প, কিছু কথা আমার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া প্রিন্সেস ডায়নার জীবনী আমায় অনুপ্রাণিত করে। তাই সোশ্যাল মিডিয়াতে আসা। এ আসা ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে। অভিনয় বা মডেলিংয়ে নিয়মিত হচ্ছি না। থাকতে চাই সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে।
প্রিসিলা আরও বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। সইতে পারি না অসুস্থ মানুষের কষ্ট। নিজে তেমন কিছু করতে পারি না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি।
বর্তমানে প্রিসিলা সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছেন। তার আইন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছাও আছে। প্রিসিলা বলেছেন, পরিবার ও আত্মীয় স্বজন এবং অনেক অপরিচিত মানুষ বিভিন্নভাবে আমায় সহযোগিতা করেন। অনেকে মনে করেন আমি অনেক টাকা উপার্জন করি। তাই খরচ করি। বিষয়টা এমন না।তার মতে, অনেক কথা আছে যা মনে হলে কষ্ট পাই। হয়তো এক সময় সব প্রকাশ করতে পারব।
প্রিসিলার ব্লগার হওয়াটা বা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতে তাকে অনেক বাধা ও বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। তিনি বলেন, কেউ আমার কাজকে সমর্থন করে, কেউবা আবার বলে মেয়ে মানুষের এসবের কি দরকার। মেয়েরা তো ঘরে থাকবে। সব মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা করি। প্রধান্য দেই। ভাল কিছু যদি করতে না পারি তাহলে দ্রুত হারিয়ে যেতে হবে। ভাল কিছু করার অপেক্ষায় আছি।
প্রিসিলা তার নিজের উদ্যোগে এই পর্যন্ত একুশটির বেশি হুইল চেয়ার জনস্বার্থে বিতরণ করেছেন। উপরন্তু দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্রিশটির বেশি টিউবওয়েল নির্মাণে সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে প্রচণ্ড মিশ করেন জানিয়ে এই ব্লগার বলেন, বাংলাদেশকে খুব মিস করি। আগামী বছর দেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দেশে এসে কিছুদিন দেশের সবচেয়ে গরীব মানুষগুলোর সঙ্গে কাটাব। উনাদের জীবন কিভাবে চলে, কিভাবে উনারা উনাদের সংসার চালান এসব নিজের চোখে দেখব। তাদের এতিমদের সঙ্গে সময় দেব। বৃদ্ধাশ্রমে সময় দেব।