প্রশ্নঃ আমরা যারা প্রবাস থেকে দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাই, ব্যাংক আমাদেরকে রেমিট্যানস বোনাস দেয়, এই বোনাসের টাকা গুলো কি সুদ হবে???
উত্তরঃ সরকার রেমিট্যান্সকে বৈধ চ্যানেলে আনার জন্যই উৎসাহ দিতে ২ শতাংশ ( বর্তমানে ৫%) হারে নগদ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সংসদীয় বাজেটে। অবৈধভাবে অর্থ পাচার বন্ধ করতেই সরকারের এই উদ্যোগ। হুন্ডি থেকে মানুষকে নিরুত্সাহিত করাই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি এর মাধ্যমে রেমিটেন্স সঞ্চয়ও বৃদ্ধি পাবে।
বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা খুব সহজে এবং সুবিধাজনক পদ্ধতিতে অনুমোদিত এবং তালিকাভুক্ত যেকোনো ফরেইন ব্যাংক, মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন(এমটিও) এবং মানি এক্সচেইঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠাতে পারছে। পাশাপাশি গ্রাহকরা শতকরা দুই টাকা অতিরিক্ত অতিরিক্ত প্রফিট পাচ্ছে।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সরকার রেমিট্যান্সের উপর যে দুই পার্সেন্ট হারে প্রফিট প্রদান করছে- শরিয়া ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী তা সরকারের পক্ষ থেকে ‘ইনআম’ বা ‘পুরস্কার’।
এই টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি রাজস্ব থেকেই সমন্বয় করছে। অর্থাৎ সরকার থার্ড পার্টি হিসেবে রেমিট্যান্সের উপর শতকরা দুই টাকা হারে প্রোভাইড(লাভ দিচ্ছে)করছে। তাই এটি গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুদ হবে না।
যদিও ধরে নেয়া হয় যে- অনুমোদিত এবং তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোই শতকরা এই দুই টাকা প্রোভাইড করছে তাহলেও তা গ্রহণ বৈধ হবে। কারণ তখন ধরা হবে সরকার ফরেইন মুদ্রার মূল্য শতকরা দুই টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী এটাও বৈধ। এটা সুদ নয়।। অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা প্রদান নয়।
সরকারের দেওয়া প্রণোদনা গ্রহণ করা সাধারণত জায়েজ। বিশেষ করে এখানে আপনাকে আপনাদের সম্পদ থেকেই কিছু অংশ সরকারী মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। এটি কোনো সুদ নয়। অতএব, এই প্রণোদনা নেওয়া জায়েজ।
প্রশ্ন : মুবাইল এ কুরাআন পাঠ করা কি যাবে ?
ক) সিজদায় গিয়ে ওজন হাতের তালুতে তাকবেনা কপালে তাকবে ?
খ) অনেক এলাকায় দেকা যায় হুজুররা বাড়িতে গিয়ে কোরআনে খতম পরেন, আবার অনেকে এটাকে বেদাত বলেন।
উত্তরঃ মোবাইলে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে।তবে যথাযথ আদব সম্মান রক্ষা করতে হবে।
ক)স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে সুবিধা সেভাবেই রাখবেন।
খ)ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্য কুরআন খতম করা সাওয়াবের কাজ।
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার যে তালকীন করা হয় সেটার সঠিক পদ্ধতি ও ফজিলত জানতে চাই।
উত্তরঃ তালকীন কি?
═══════
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নত হল, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে [লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ] এর তালকীন দেয়া।
তালকীন দেওয়ার অর্থ হল: তার পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা।
এটাই হচ্ছে তালকীনের সহিহ তরিকা।
তালকীনের উদ্দেশ্য ও ফজীলতঃ
═══════════════
👉 মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
« مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ »
“যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
★ সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ: তালকীন। [মানঃ সহীহ]
👉 হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, হযরত (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে (মৃত্যুর পুর্ব মূহুর্তে) কালিমার তালকীন দান কর৷ কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ কথা হবে [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে৷
★ মুসলিম ২১৬২ : অধ্যায়ঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া। [হাদিসের মানঃ সহিহ]
আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ لِلْأَحْيَاءِ قَالَ أَجْوَدُ وَأَجْوَدُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের,
-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”
এর তালকীন দাও। তারা বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! জীবিত (সুস্থ) ব্যক্তিদের বেলায় এ দুআ কেমন হবে? তিনি বললেনঃ অধিক উত্তম, অধিক উত্তম।
[হাদিসের মানঃ দুর্বল, আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য]
তথ্যসূত্রঃ
১.সুনানে ইবনে মাজাহঃ অধ্যায় জানাযাহ
প্রশ্ন : (ক) কোন সন্তান মৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করলে তার জানাযা এবং কাফন পড়ানো লাগবে কি?
(খ)কোন লোক খাবারে এবং ওজু করা অবস্থায় সালাম দেওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ জীবিত বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মারা গেলে সাধারণ মৃতের মতোই তার গোসল ও কাফন দিতে হবে এবং জানাযার নামায পড়ে দাফন করতে হবে। এ ধরনের বাচ্চার (বয়স সাত দিনের কম হলেও) নাম রাখার কথা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। আর যদি বাচ্চা মৃত ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে না। তবে তাকে গোসল দিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিবে।
অবশ্য এধরনের বাচ্চাকে চাইলে তিন কাপড়েও কাফন দিতে পারবে। আর এ শিশুরও একটি নাম রেখে দিবে। একই পন্থা অবলম্বন করবে ঐসব অসম্পূর্ণভাবে জন্ম নেয়া মৃত শিশুদের ক্ষেত্রে, যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। আর যদি নষ্ট হয়ে যাওয়া গর্ভের কোন অঙ্গ না হয়ে থাকে; বরং শুধু গোশতের টুকরা বের হয় তাহলে তা একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে কোথাও দাফন করে দিবে। এক্ষেত্রে যেমন জানাযা নেই, তেমনিভাবে গোসল, নামরাখা কোন কিছুরই বিধান নেই।
-জামে তিরমিযী ১/২০০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৫৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; জামিউ আহকামিস সিগার ১/৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৪, ২২,২২৮
৩(খ)
শরীয়তের বিধান পালন করার কারনে হোক,বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকার কারনেই হোক,যেই মুহুর্তে সালাম দিলে তার সালামের জবাব দেওয়া অসুবিধা হবে,সেই সময় সালাম দেওয়া মাকরুহ।
ফাতাওয়ায়ে শামী (২/৩৭৫) তে সেই সময় গুলো উল্লেখ করা হয়েছেঃ
নামাজ রত ব্যাক্তি,কুরআন তেলাওয়াত রত ব্যাক্তি,যিকির রত অবস্থায়, হাদীসের দরস দান করার সময়,খুতবা বা ওয়াজ করার সময় বক্তাকে এবং তাতে শ্রোতাদেরকে,নামাজ রত ব্যাক্তির কাছের কাউকে সালাম দেওয়া,ফিকাহ নিয়ে গবেষণা রত ব্যাক্তি, বিচার কার্য সম্পাদন রত অবস্থায় বিচারককে,ইলম শিক্ষারত অবস্থায়,আযান ইকামতের সময়,ক্লাশরত শিক্ষার্থীদেরকে,গায়রে মাহরাম যুবতী মহিলাকে,দাবা বা যেকোনো অনার্থক কাজ বা খেলায় লিপ্ত ব্যাক্তি,স্ত্রীর সাথে সহবাস বা তার পূর্ব মুহুর্তে ব্যাক্তি কে সালাম দেওয়া,ছতর অনাবৃত ব্যাক্তি,ইসতেঞ্জা রত ব্যাক্তি, খানা খাওয়া অবস্থায়, (কিন্তু লোকমা মুখে না থাকা অবস্থায় যদি তাকে সালাম দিলে সে কিছু মনে না করে, তাহলে তাকে সালাম দেওয়া যাবে),অযু রত অবস্থায়।
উক্ত সময়ে উল্লেখিত ব্যাক্তিদেরকে সালাম দেওয়া মাকরুহ।
উক্ত সময় গুলিতে
উল্লেখিত ব্যাক্তিদের জন্য সালাম গ্রহন না করা জায়েয।
প্রশ্নঃ শাশুড়ির খেদমত কি ইসলামে বাধ্যতামূলক?
উত্তর:ইসলামী শরিয়তে স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া অন্য কারও আনুগত্য করাকে ফরজ করা হয় নি। আর স্বামীর সেবা করা ও তাকে খুশি রাখা একজন স্ত্রী জান্নাতে যাওয়ার কারণ। কিন্তু স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্য কারো নির্দেশ পালন করা ফরজ নয় এবং তাদের সেবা করার বিষয়টি ঐচ্ছিক বিষয়।
তবে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা যেমন স্বামীর প্রতি ইহসান ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ অন্যদিকে নেকীর কাজ তাতে কোন সন্দেহ নাই। কোন স্ত্রী যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে তবে আল্লাহ তাআলা তাকে আখিরাতে পুরষ্কার প্রদান করবেন ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করাকে একজন নারীর ভালোগুণ হিসেবে ধরা হয়। তাই সামাজিক এই সুন্দর কালচারটি বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
তাছাড়া এটাও মনে রাখা দরকার যে, তার জীবনেও কোনও একদিন এমন সময় আসতে পারে যখন তার পুত্রবধূর সেবা প্রয়োজন দেখা দিবে। তাই সে যদি এখন সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে তবে সে যখন শাশুড়ি হবে তখন আশা করা যায়, তার পুত্রবধূরা তার সেবা করবে।